
আমাদের বাঙ্গালীর আত্মপরিচয়ের একটা বড় অংশ দখল করে আছে ‘বৌদি’ নামক শব্দটি। ফেসবুকের কল্যাণে উদ্ভট কিছু পেজে তুচ্ছ, বৌদিরা ‘পানু’, ঝুমা বৌদি, উমা বৌদি, দেশী বৌদি, সুন্দরী বৌদি ইত্যাদি নামে লেখা বা ছবি ছড়ালেও এই মুহূর্তে ইউটিউবে তারা ডানা মেলেছেন। এ নিয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে।
‘বৌদি’ শব্দটির সাথে কানে নিঃশব্দে বেজে যায় ‘ছাতা ধরো হে দেওরা’ গানটি। না, সে গান আজ আর তত আবেদনময় নয়। এই মুহূর্তে ইউটিউব হিট ‘রঙ্গিলা বৌদি’-দের নিয়ে। ‘রঙ্গিলা বৌদি’র নতুন গাছে নাকি ভালবাসার ডালিম ধরেছে। বলাই বাহুল্য, ঘোর সাজেস্টিভ এই গান। এবং এই গান যেন ইউটিউবের যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা বৌদিদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
এখন প্রশ্ন, কারা এই ‘ইউটিউব বৌদি ’? এ এক আজব জগৎ। এখানে ওয়েবসিরিজে মুখ দেখানো ‘দুপুর বউদি’ থেকে শুরু করে, শর্ট ফিল্মের ‘হট বউদি’, এমনকী পাশের বাড়ির টিকলি বউদি পর্যন্ত অবস্থান করছেন। ওয়েল এডিটেড ওয়েবসিরিজ, যাচ্ছে তাই শর্ট ফিল্ম এবং একবারে যেনতেন রেজুলেশন এর ক্যামেরা সম্বলিত মোবাইলে তোলা প্রাইভেট ভিডিওতেও ছড়িয়ে পড়েছেন এইসব বৌদিরা । এখানে কোন প্যাটার্ন খুঁজতে চাওয়া ভুল হবে।
ফেসবুকে ‘বৌদি পেজ’-গুলোর পিছনে মধুচক্র জাতীয় বিষয় থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু ইউটিউবে ছড়িয়ে থাকা বৌদিরা মোটেই সেই রকমের নয়। কি তাঁদের উদ্দেশ্য, কি সংকেত দিতে চাইছেন তারা?
‘বেঙ্গলি হট বৌদি ডান্সিং’ বা ‘বাংলা বৌদি চরম গালাগাল’-জাতীয় ভিডিও আপলোড করে কার কী লাভ, তা বোঝা মুশকিল। বেশ কিছু তথাকথিত শর্ট ফিল্মের শিরোনামে ‘বৌদি’ শব্দটা যুক্ত করে হিট বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিছু অসৎ লোক।
আবার এই সব ভিডিওকে সম্পূর্ণ অর্থে নিরর্থকও বলা যায় না। ‘ইন্ডিয়ান হট বৌদি ডান্সিং’ নামে একটি ভিডিওর আপলোডার ভেবেছিলেন এতে করে ভালো কিছু ইনকাম আসবে কিন্তু বিধি বাম ভিউ মাত্র ২৬।
তবে সকলেই যে এমন লোকসান গুনছেন তাও কিন্তু নয়। যেমন ‘দেশি বউদি টেকিং বাথ’-জাতীয় ভিডিওর পিছনে দু’মাসে ৫০ হাজারের বেশী দর্শক পড়ে রয়েছেন।
এসব দেখে একটা প্রশ্ন মাথায় আসতে বাধ্য— উন্মুক্ত নেট-দুনিয়ায় যেখানে মুড়ি-মুড়কির মতো পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য, সেখানে এই সব ইউটিউব ভিডিও লোকে দেখে কেন?
দেখার সম্ভবত একটাই কারণে, সেটা হল এইসব ভিডিওর গায়ে ‘বৌদি’ তকমাটির জন্য। সকল কিছুর পর তাহলে বলতেই হয় ফেসবুক-ইউটিউব বৌদিদের জন্য এক শ্রেণীর লোকেদের ভালই দিন কাটছে!